কিভাবে অনলাইন ব্যবসা শুরু করবেন? ৪টি সহজ ধাপে শিখুন

অনলাইন ব্যবসা
How to Start Online Business

অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে হলে অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে অনলাইন ব্যবসাটা কী? এবং অনলাইন ব্যবসা বলতে কী বুঝায়? অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা অর্জন করার পরই আপনি ব্যবসায় যাত্রা শুরু করতে পারেন। না জেনে কোন কিছু শুরু করা অবশ্যই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আবার সবটা জেনে শুরু করা; সেটাও মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা সবটা জানতে গেলে শুধু জানতেই থাকবেন, জানার আর শেষ হবে না; অন্য দিকে অনলাইন ব্যবসাটা শুরু হবে না। মেসি যদি ফুটবলের নারী-নক্ষত্র যা আছে সবটা জেনে তারপর খেলায় নামার কথা ভাবতেন, তাহলে তিনি পৃথিবী সেরা ফুটবল খেলোয়াড় হতে পারতেন না। সবটা জানতে জানতে তার মৃত্যু চলে আসবে তবুও তার জানার শেষ হতো না। অন্যদিকে, আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে একজন সফল উদ্যোক্তা একটি সম্পূর্ণ ধারণার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। কারণ সে জানে মূর্খতাই সফলতার সবচেয়ে বড় বাধা।অনলাইন ব্যবসা কী সেটা খুব সুন্দর উদাহরণে এই লিঙ্কে বুঝানো হয়েছে, আপনি চাইলে পড়ে আসতে পারেন। এতে করে আপনি বর্তমান প্রবন্ধ কর্মক্ষমতা সম্পর্কে আরো ভালো ধারণা পাবেন। আমার এই বিষয়বস্তুটি লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আপনার অনলাইন যাত্রার পথটা সহজ ও নির্ভুল তৈরী করা। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাকে একটি অনলাইন ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু করার আগে সম্পূর্ণ তথ্য দেবে; ফলে অন্য কোনো আর্টিকেল বা ভিডিও দেখার প্রয়োজন হবে না।

পদক্ষেপসমূহ:

  1. অনলাইন ব্যবসায় সূচনা ও উপলব্ধি
  2. পূর্ণ অনলাইন ডেকারেশন প্রস্তুত
  3. অনলাইন মার্কেটিং কৌশল
  4. ব্যবসায় পরিচালন ও সফলতা

অনলাইন ব্যবসায় সূচনা ও উপলব্ধি

প্রতিটি কাজের শুরুতেই কিছু প্রাথমিক পদক্ষেপ নিতে হয় ঠিক তেমনি ভাবে আমরাও অনলাইন ব্যবসা শুরু করার পূর্বে কিছু প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ নিবো যেটা ব্যবসায় অতিব গুরুত্বপূর্ণ।

কাজের প্রতি বিশ্বাস: 

অনলাইন ব্যবসা কেন শুরু করবেন? আপনি কী মনে করেন আপনি অনলাইন ব্যবসা পারবেন? আপনি যে পারবেন তার প্রবল আকাঙ্খা নিয়েই এই সেক্টরে আসতে হবে। কেননা আপনার জীবন গড়ে দেওয়ার জন্য কেউ বসে নেই। জীবনে কিছু করে দেখাতে হলে শুরুটা আপনাকেই করতে হবে। ভাগ্য আপনা-আপনিই পরিবর্তন হয় না, ভাগ্য পরিবর্তনে প্রচুর পরিশ্রম ও সাধনা করতে হয়। আপনার সমস্যা নিয়ে কারো কোনই মাথা ব্যথা নেই, নেই আপনাকে সফল করে দেওয়ার টার্গেটও। সবাই সবার কাজে ব্যস্ত। আপনাকে নিয়ে ভাবার বিন্দু পরিমান সময় কারো হাতে নেই। তাই কেবল প্রবল আগ্রহে নিজের কাজ নিজেকেই করে যেতে হবে। অনলাইন ব্যবসায় শুরু করে হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। শুধু এই বিশ্বাসটা রাখুন আপনিও পারবেন। শত বাধা প্রতিবন্ধকতা যাই আসুক কাজটাকেই আকড়ে ধরবেন। আজ থেকে স্বপ্ন বুনতে শুরু করুন একদিন আপনিও বিলিউনিয়ার হবেন। আপনি স্বপ্ন দেখুন বা নাই দেখুন কিছু দিন পর ঠিকই দেখবেন; একি কাজ করে অন্য কেউ সফল হয়ে গেছে। আপনার হাল ছেড়ে দেওয়া অসমাপ্ত কাজটি কেউ একজন করে ঠিকই বিলিউনিয়ার হয়ে গেছে। কেবল আপনারই পূর্বের অবস্থা। তখন কেমন লাগবে? তখন জেদটা এসেও হেরে যাবেন; নিজেই নিজের কাছে! প্রশ্নের জালে আটকা পড়ে থাকবেন, কেন শুরুটা করলেন না। কেন হাল ছেড়ে দিলেন। কেন বিশ্বাস রাখলেন না আপনিও অনলাইন ব্যবসা পারবেন?

টপিক বাছাই করণ :

এমন কাজ নিয়ে ব্যবসায় শুরু করা উচিৎ নয় যেই কাজে পূর্ব অভিজ্ঞতা একদমি নেই। পাশা-পাশি খুঁজে বের করতে হবে; সেই কাজটিতে আপনার আগ্রহ কতটা গাঢ়? অভিজ্ঞতা ও ভালো লাগার মিশেলে কাজটিকে খুঁজে বের করতে হবে। ভালো লাগাহীন কাজে আপনার মনোযোগ টিকবে না অন্য দিকে অনভিজ্ঞতার কারণে অনলাইন ব্যবসায় পরিচালন ব্যর্থ হতে পারে। আপনি একটি পৃষ্ঠা নিয়ে আপনার ভালো লাগার ১০টি কাজের প্রাথমিক লিস্ট করুন। এর পর ভালোলাগা কাজ গুলোকে ক্রমান্বয়ে সিরিয়াল করুন ১,২,৩। প্রাথমিক বাছাইকৃত কোন কাজটিতে আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতা কিছুটা হলেও বেশী! সেটাকে আবার ক্রমান্বয়ে ১,২,৩ সিরিয়াল করে বাছাই করুন। এবার আমরা বাছাইকৃত ৩টা কাজের বিষয় বস্তু পেয়ে গেলাম। না বুঝলে নিচের উদাহরণটি অনুসরণ করুন।

টপিক বাছাইকরণ ডেমো উদাহরণ-
প্রাথমিক কাজের লিস্ট: 
  • ভ্রমণ করা
  • ছবি আঁকা
  • গিটার বাজানো
  • ডিজিটাল মার্কেটিং
  • জামা-কাপড় বিক্রি
  • ওয়েব ডেভলোপমেন্ট
  • গ্রাফিক্স ডিজাইন
  • তৈরী পন্য বিক্রি
  • হস্তশিল্প
  • কম্পিউটার
  • ইত্যাদি।
ভালোলাগার আলোকে কাজের লিস্ট:-
  • গ্রাফিক্স ডিজাইন
  • ডিজিটাল মার্কেটিং
  • ভ্রমন করা
  • কম্পিউটার
  • জামা-কাপড় বিক্রি
  • হস্তশিল্প
  • তৈরী পন্য বিক্রি
  • ওয়েব ডেভলোপমেন্ট
  • গিটার বাজানো
  • ছবি আঁকা
অভিজ্ঞতার আলোকে কাজের লিস্ট:-
  • ছবি আঁকা
  • ভ্রমণ করা
  • গিটার বাজানো
  • ডিজিটাল মার্কেটিং
  • হস্তশিল্প
  • কম্পিউটার
  • ওয়েব ডেভলোপার
  • গ্রাফিক্স ডিজাইন
  • জামা-কাপড় বিক্রি
  • তৈরী পন্য বিক্রি

এবার আমরা অনলাইন ব্যবসায় চূড়ান্ত ৩টি টপিক বাছাই করবো।

ছবি আকা অভিজ্ঞতার আলোকে সবার উপরে; তবে ভালো লাগার জায়গায় ১০ নম্বরে, তাই এটা বাদ। ভ্রমন করা অভিজ্ঞতায় ২ এবং ভালো লাগায় ৩ নম্বর, বাহ এটা বেশ, এটা নিয়ে নিলাম। গিটার বাজানো অভিজ্ঞতায় ৩, ভালোলাগায় ৯ নম্বরে, তার মানে ভালোলাগার জায়গায় একটু বেশিই পিছনে তাই এটাও বাদ। ডিজিটাল মার্কেটিং অভিজ্ঞতায় ৪, ভালোলাগায় ২ এটাও নিয়ে নিলাম। হস্তশিল্প যথারিতি ৫ ও ৬ থাকায় এটাও নিয়ে নিলাম।

চূড়ান্ত টপিক
  • ভ্রমণ
  • ডিজিটাল মার্কেটিং
  • হস্তশিল্প
অনলাইন ব্যবসায় ধরণ নির্বাচন

সাধারণত বর্তমানে ৩ ধরনের অনলাইন ব্যবসা বিদ্যমান। B2B, B2C ও C2C এখন এর মধ্যে থেকে আপনার বিজনেস কোন ধরনের হবে সেটাকে নির্বাচন করতে হবে।

B2B: একটি বিজনেস হতে অন্য আরেটি বিজনেসে পন্য অথবা সেবা সরবরাহ করার মাধ্যমে উভয়ের লেনদেনে শেয়ার ভ্যালু সৃষ্টি হওয়াকে B2B বিজনেস বলে। অর্থাৎ Wholesale to retailer লেনদেন।

উদাহরণ: Slack, Shopify, Hubspot, Alibaba

B2C: একটি ব্যবসা থেকে সরাসরি ক্রেতার নিকট পন্য পৌছানোর মাধ্যমে উভয়ের লেনদেন সংগঠিত হয় ফলে সৃষ্টি হয় দ্বিপাক্ষীক শেয়ার ভ্যালু। উভয়ের ভ্যালুর মাধ্যমে ক্রেতা পেয়ে থাকে পন্য আর বিক্রেতা পেয়ে থাকে পন্যের মূল্য । উদাহরণ: Amazon, AliExpress , Netflix, Tencent 

C2C: এই ধরনের বিজনেসের পরিসংখ্যানটা B2C তুলনায় অনেক কম। এখানে ক্রেতা হতে ক্রেতারই লেনদেন সংগঠিত হয়। আবার এমন হয় যে এই বিজনেসের প্রভাইডার ক্রেতা বিক্রেতার উভয়ের ভ্যালুকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। উদাহরণ: Uber, PayPal, ebay, Etsy, Craigslist, Daraz, Evaly।

আশা করি, আপনার অনলাইন ব্যবসায় টপিকের সাথে, ব্যবসায় ধরণ নির্বাচন করতে সমস্যা হবে না।

বিশ্লেষণ:

টি টপিক বাছাই করার পর প্রত্যেকটি টপিককে নিখুঁতভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে, যাতে নির্ভুল যাত্রা শুরু করা যায়। বিশ্লেষণ করে খুজে দেখতে হবে এই টপিকে আপনার প্রতিযোগী কারা? তাদের অবস্থান কী বা কেমন, ফিল্ড অডিট করুন, একই সাথে প্রতিযোগীদের অতীত কী ছিলো, বর্তমান কেমন, এবং ভবিষৎ এ তাদের অবস্থান কোথায় যাবে; বিস্তর বিশ্লেষণ করুন। প্রতিযোগীরা অনলাইনে কত দিন ধরে আছে, সফলতায় তাদের গ্রাফটা কী? সেটাও খুজে বের করুন এতে আপনি উপলব্ধি ও উৎসাহ পাবেন অনলাইন ব্যবসাটি শুরু করার। যেহেতু অন্যরা সফল হয়েছে তা হলে আপনারও সুযোগ রয়েছে সফল হওয়ার। এত কিছু করার একটাই উদ্দেশ্য বিজনেসটা বাস্তস্মত কি না তা যাচাই করা; যাতে অদূর ভবিষ্যৎ এ ঠেকে যেতে না হয়। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানরা কিভাবে অনলাইন ব্যবসায় করছে তাদের সাইটের ভিজিটর কত ও প্রফিট কেমন? ইত্যাদিও রিসার্চ করতে হবে। তারল্য ঝুঁকি কী? অথবা কম্পিটিটর SWOT ও করে নিতে পারেন। একি সাথে টপিকের সাথে মিল রেখে B2B করবেন নাকি B2C অথবা C2C সেটাও পূর্ণ প্রস্তুতি বিশ্লেষণ তৈরী করুন। তারপর কি ধরনের পন্য ভালো চলছে, কোন পন্যের উপযোগ সৃষ্টি করা উচিৎ ইত্যাদিরও বিশ্লেষণ অত্যন্ত জরুরী। আর এই অত্যন্ত জরুরী বিষয় গুলোকে ভালো করে বিশ্লেষণ করার জন্য একজন অভিজ্ঞ অনলাইন বিজনেস কনসালটেন্সের সহযোগীতা নিতে পারেন; এর ফলে ব্যবসার শুরুটা হবে মজবুত ও নির্ভুল।

পন্য বা সেবা:

একটি অনলাইন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় কোন একটি পন্য অথবা সেবা দেওয়ার মাধ্যমে তাই এই সেবার ব্যাপারে সব থেকে বেশী নজর দিতে হবে। পন্যের রিসার্চ ও গবেষণা আপনাকে সর্বোত্তম পন্য সরবরাহ করতে সাহায্য করবে। ব্যবসায় যদি পন্যের গুনগত মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে তবে আপনার অনলাইন ব্যবসায় এখানেই শেষ।

একজন আদর্শ অনলাইন ব্যবসায়ী অবশ্যই তার ক্রেতাদের কথা সব থেকে বেশী ভাবে। তাই সর্বদা পন্যের নতুন নতুন সংযোজন ও মানের দিকে তৎপর থাকুন। পন্যের কাঁচামাল কোথা থেকে সংগ্রহ করবেন তার জন্য খসরা প্রস্তুত করুন এবং সেই কাঁচামাল দিয়ে কিভাবে উৎপাদন করবেন তার পরিকল্পনা প্রণয়ন করুন। যদি নিজস্ব পন্য না হয় তবে কোথায় থেকে পন্য সংগ্রহ করবেন? কাদের পন্য বিক্রি করবেন তাদের একটি তালিকা তৈরী করুন। যাদের কাছ থেকে পন্য ক্রয় করছেন তাদের গুনগত মান কতটা ভালো পরীক্ষা করে নিন এবং তাদের মূল্যের বিষয়ে সতর্ক থাকুন। কেননা প্রতিযোগীতার বাজারে ক্রয়ে জিততে না পারলে পুঁজি হারাতে হবে, অন্যদিকে বেশী দামি পন্য বেচতে গেলে প্রচন্ড ধাক্কা খেতে হবে। তাই সব সময় পন্য ক্রয়ে জয়ী মন-মানসিকতা রক্ষা করুন। যদি আপনি এতটুকুন করতে পারেন তবে আমি বলবো আপনি সফল।

অনলাইন ব্যবসায় পন্য সাধারণত দু’ধরনের হয়ে থাকে।

  • ডিজিটাল পন্য বা সেবা
  • ফিজিক্যাল পন্য বা সেবা

ডিজিটাল পন্য: যেই পন্য বা সেবা হাত দিয়ে স্পর্শ করা যায় না বরং ডিজিটাল ডিভাইসেই ব্যবহৃত হয় তাকেই ডিজিটাল পন্য বলে। যেমন: Software, Website Design, Video/Animation Creation, Online Marketing, Virtual Product ইত্যাদি।

ফিজিক্যাল পন্য: যেই পন্য সাধারণত সচারাচর আমরা পেয়ে থাকি। যা হাত দিয়ে স্পর্শ করা যায় তাকেই ফিজিক্যাল পন্য বলা হয়। যেমন: পোষাক, খাবার, হার্ডওয়্যার, টিভি, কম্পিউটার ইত্যাদি।

মিশন ও ভিষণ: 

আপনার প্রতিষ্টানের জন্য থাকতে হবে সুস্পষ্ট একটি মিশন ও ভিষণ স্টেটমেন্ট। মিশন এবং ভিষণ নিয়ে খুব সহজ ভাষায় যদি বলি; তা হলে বলবো, আজ আপনি যা করবেন তা ঠিক করা হলো মিশন, আর আগামীকাল আপনি কী করবেন তা হলো আপনার ভিষণ। ঠিক তেমনি ভাবে আপনারঅনলাইন ব্যবসায় মিশন ও ভিষণ টা কী? যদিও বর্তমানের বেশীর ভাগ স্টার্টআপ শুরুই করে মিশন ও ভিষণ মাস্টার পরিকল্পনার মাধ্যমে। তা হলে আপনার ব্যবসায়ের কার্যকারী মিশন টা কী? এবং আপনার প্রতিষ্টানটি ভবিষৎ এ কি করবে? একটি উদাহরণ ভালো করে খেয়াল করুন। Google এর মিশন হলো, “Organize the world’s information and make it universally accessible and useful.”এবং তাদের ভিষণ, “provide an important service to the world-instantly delivering relevant information on virtually any topic.”

অবজেক্টিভ:

অনলাইন ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য গুলোকে সুনিদির্ষ্ট ভাবে তুলে ধরতে হবে। আপনি যেই মিশনটা টার্গেট করেছেন, ঠিক তাতে পৌঁছাতে হলে আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য কী কী করা জরুরী তা সনাক্ত করুন এবং আপনার ব্যবসায় সর্বোচ্চ উদ্দেশ্যাবলীকে আরো বেশী কার্যকর করুন যাতে আপনার গ্রাহক এবং আপনি উভয়ের সম্বনয় যথার্থ হয়।

ভ্যালু প্রোপজিশন:

প্রতিটি অনলাইন ব্যবসায় ভ্যালু প্রোপজিশন বিদ্যমান। কেননা কাস্টমারকে ভ্যালু দিতে না জানলে, কাস্টমারও আপনাকে ভ্যালু দিবে না। তাই কাস্টমার ভ্যালু নিয়ে কাজ করা অতীব জরুরী।

আপনি ভ্যালু বলতে কী বুঝেন? গ্রাহক আপনার প্রতিযোগীদের কাছ থেকে পন্য অথবা সেবা ক্রয় না করে কেন আপনার কাছ থেকে ক্রয় করবে? এই প্রশ্নের উত্তরটা প্রস্তুত করাই ভ্যালু প্রোপজিশন। ভালো সেবা, দ্রুত ডেলিভারী, ডিস্কাউন, ২৪ ঘন্টা সার্ভিস ইত্যাদি আরো অনেক ধরনের ভ্যালু নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করে যেতে হবে। মনে রাখবেন, যেই প্রতিষ্ঠান যত বেশী ক্রিয়েটিভ ভ্যালু সৃষ্টি করে সেই প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের কাছে ততবেশীই জনপ্রিয়। এবার আপনিই সিদ্ধান্ত নিন প্রতিষ্ঠানকে জনপ্রিয় করতে কী কী ভ্যালু সৃষ্টি করবেন।

পরিকল্পনা ও কর্মী নিয়োগ:

পরিকল্পনা করুন কবে থেকে অনলাইন ব্যবসাটি শুরু করবেন। ব্যবসাটি পূর্ণ কার্যকর করতে উপরিক্ত বিষয় গুলো মেনে চলুন। যদি আপনার দ্বারা সবটা কার্যকর করা সম্ভব না হয় তবে সেক্ষেত্রে অনলাইন বিজনেস কনসালটেন্সি সাহায্য নিন। তারা আপনার অনলাইন ব্যবসায় পরিকল্পনার কৌশল গুলোকে হাতে কলমে তৈরী করে দিবে। পাশা-পাশি বিজনেস পরিচালন দিক গুলোর ভুলটাও ধরিয়ে কার্যকর পরামর্শ প্রদান করবে। কতজন কর্মী নিয়ে ব্যবসা শুরু করবেন? অফিস ডেকারেশন, ওয়ার্ক স্টেশন, ব্রান্ড ডিজাইন, ব্যানার ইত্যাদি নিয়ে অফলাইন পরিকল্পনা তৈরী করুন। আর যদি আপনি চান বড় পরিসরে না করে কেবল অনলাইন ভিত্তিক কার্যক্রম করবেন; তবে সেটাও করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আপনাকে এজেন্সি দিয়ে অনলাইন কোর সেটাপটি তৈরী করে নিতে হবে। যদি আপনি ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে জানেন তবে নিজেই ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। না জানলে শিখে নিতে পারেন, কেননা এটা খুব জটিল স্কিল নয়। সাথে ১ জন মার্কেটার নিয়েই যাত্রা করতে পারেন। পরে আস্তে আস্তে ব্যবসায় পরিধি বাড়তে থাকলে কর্মী নিয়োগও বাড়িয়ে নিবেন। কিন্তু আপনি যদি শুরুটাই বেশ ভালো ভাবে করতে চান সেক্ষেত্রে, পূর্নাঙ্গ অফিস ও বিজনেস কাঠামো অনুযায় সঠিক কর্মী নিয়েই শুরু করবেন।

বৈধতা ও অনুমোদন:

আপনি যে দেশে অনলাইন ব্যবসাটি পরিচালন করবেন সেই দেশের আইন অনুযায়ী ব্যবসায় অনুমতি ও বৈধতা যাচাই করণ করে নিবেন। ট্রেড মার্ক লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট, কম্পানি রেজিস্ট্রেশন, বিভিন্ন ধরনের এসোসিয়েশন রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে আপনার ব্যবসার প্রয়োজন অনুযায়ী সকল ধরনের ডকুমেন্ট প্রস্তুত করে রাখবেন। সব ধরনের বৈধতা অনলাইন ব্যবসায়ের প্রানকে সুস্থতা দান করে।

অনলাইন ব্যবসায় ডেকোরেশন প্রস্তুত করণ

ডোমেন ও হোস্টিং:

প্রতিটি অনলাইন ব্যবসায় প্রয়োজন হয় একটি ডোমেন ও হোস্টিং। ডোমেন হলো আপনার অনলাইন ব্যবসায়ের ওয়েব নাম। আর হোস্টিং হলো সেই ওয়েব নামের জায়গা। অর্থাৎ সম্পত্তির নাম এবং জায়গা। এখন ওই জায়গার উপর বাড়ী তৈরী করবেন। এই বাড়ি তৈরী করাই হলো ওয়েবসাইট ডিজাইন ও ডেভলোপমেন্ট। এবং বাড়িটির নিরাপত্তার জন্য কাজ করবে SSL Certificate। আপনি যখন হোস্টিং কিনবেন তখন অনেক হোস্টিং প্রভাইডারই এই SSL ফ্রিতে দিবে আর যদি না দিয়ে থাকে তবে, অল্প কিছু টাকা খরচ করে অবশ্যই কিনে নিবেন। একটি ভালো ইমারত তৈরীতে যতবেশী খরচ করবেন ততবেশীই তার নকশা ও অবকাঠামো উন্নতশীল হবে। ঠিক তেমনি ভাবে অনলাইন ওয়েব সাইটের ডেভলোপমেন্ট ও ডিজাইনে যতবেশী খরচ করবেন ততবেশীই উন্নত ও মানসন্মত হবে। আবার ভালো বাড়ী তৈরীতে জায়গাটাও বেশী লাগতে পারে, তাই হোস্টিং স্পেসটাও বারিয়ে নিতে হবে। আরো পড়ুন: কিভাবে  অনলাইন ব্যবসায়ের ডোমেন ও হোস্টিং ক্রয় করবেন?

ব্রান্ড স্ট্র্যাটেজি ও ডিজাইন: 

আপনার অনলাইন ব্যবসায় প্রতি কাস্টমার কেন আগ্রহ দেখাবে? তাদের আগ্রহ তৈরীতে আপনার করণীয় কী? আপনার ওয়েবসাইট, সোস্যাল মিডিয়া, অফলাইন ডেকোরেশন, বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে সব কিছুতেই একটা ব্রান্ডিং ছাপ নিয়ে আসতে হবে যাতে গ্রাহকরা আপনার ব্যবসাটিকে দেখে সহজেই চিনতে পারে। গ্রাহকরা কখন আপনার ব্যবসাকে সনাক্ত করতে পারবে? যখন আপনার ব্যবসায়ের সব কিছুই একটি নিদিষ্ট কালারে ডিজাইন করা থাকবে তখন। ডোমেন হোস্টিং ক্রয় করার পরই ভালো একজন ব্রান্ড মার্কেটারের সাথে পর্যালোচনা করেই আপনাকে ব্রান্ড ডিজাইন স্ট্র্যাটেজি তৈরী করতে হবে। এবং সেই স্ট্র্যাটেজির আলোকেই ডিজাইনার লোগো থেকে শুরু করে যাবতীয় ডিজাইন সম্পূর্ণ করবে, ওয়েব ডিজাইনার সাইট ডিজাইন করবে এবং সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটার সব গুলো সোস্যাল মিডিয়াকে ব্রান্ডিং অপ্টিমাইজ করে কনটেন্ট প্রদান করবে। উদাহরণ হিসেবে কিছু সাইট ও তাদের কার্যক্রম খেয়াল করুন, bKash, Amazon, Alibaba, Grameenphone ইত্যাদি।

ওয়েব সাইট তৈরী:

একটি ভালো ওয়েবসাইট তৈরীতে বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। এর মধ্যে সব থেকে বেশী খেয়াল রাখতে হবে সাইটের লোডিং স্পিড ঠিক আছে কিনা, সাইটটি মোবাইল ফ্রেন্ডলি কি না। সাইটের থিমটি SEO ফ্রেন্ডলি কি না। বর্তমানের বেশীর ভাগ সাইট-ই তৈরী হয় ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে। কেননা এই ওয়ার্ডপ্রেসই পৃথিবীর ১ নম্বর জনপ্রিয় CMS Platform । পৃথিবীর প্রায় ৬০-৭০% সাইট এই ওয়ার্ডপ্রেস দিয়েই তৈরী। চেষ্টা করবেন সাইটটিকে ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে তৈরী করতে। পেইড থিম ব্যবহার করবেন এতে অনেক বেশী সুবিধা পাবেন,পাশা-পাশি চেষ্টা করবেন উন্নতমানের প্লাগিন ব্যবহার করার। কোনরূপ প্রাইরেটেড নাল অথবা ক্রেক থিম,প্লাগিন ব্যবহার করবেন না এতে সাইট হ্যাকিং এর শিকার হবে।সাইটটি যদি ইকমার্স হয় তবে WooCommerce প্লাগিন ব্যবহার করবেন।

সোস্যাল মিডিয়া প্রস্তুত করণ:

দেশ অনুযায়ী অডিয়েন্স রিটার্গেট করে দেখতে হবে কোন কোন সোস্যাল মিডিয়া আপনার অনলাইন ব্যবসায়ের জন্য উপযুক্ত। কারণ সব সোস্যাল মিডিয়া সব ধরনের অনলাইন ব্যবসায় জন্য উপযুক্ত নয়। Reddit একটা জনপ্রিয় সোস্যাল মিডিয়া তাই বলে কী এটা সব দেশ থেকে; ট্রাফিক নিয়ে আসতে পারে? উত্তর: না। কেননা আমাদের খুজে বের করতে হবে বিজনেস অনুযায়ী কোন মিডিয়া সব থেকে বেশী সেরা ও উপযুক্ত। যেমন B2B ব্যবসায় LinkedIn অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সব ধরণের মিডিয়াকেই বেশী গুরুত্ব দেওয়া যাবে না, কেননা সব কিছুতে গুরুত্ব দিতে গেলে কার্যকর মিডিয়াতে ফোকাস কমে যাবে। তাই অনলাইন ব্যবসায় শুরুর দিকে ৪-৫ মিডিয়াকেই বেশী গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। তবে বিজনেস রিলেভেন্ট যত গুলো সোস্যাল মিডিয়া আছে সব গুলোরই একাউন্ট করে ফেলবেন, তা না হলে অন্যরা ইউজার বুক করে ফেলবে। শুধু একাউন্ট করলেই হবে না সেরা মিডিয়া গুলোকে SEO ফ্রেন্ডলী অপ্টিমাইজ করতে হবে ফলে সার্চ রেজাল্ট পেজ গুলোর মধ্যে আপনার পেজ এগিয়ে থাকবে। সেই সাথে ব্র্যান্ডিং ডিজাইন করতে হবে যাতে আপনার গ্রাহকরা ব্র্যান্ডিং ট্রাস্ট ফিল করে আপনাকে সনাক্ত করতে পারে। যার ফলে আপনার ব্যবসায় অথোরিটি বহুগুনে বেড়ে যাবে। সোস্যাল মিডিয়াকে যদি ব্র্যান্ডিং আকারে দাড় করাতে না পারেন তবে আপনার বিজনেস এখানেই শেষ।

প্রডাক্ট লিস্টিং:

আপনার সাইটটি যদি ওয়ার্ডপ্রেসে হয়ে থাকে, তবে Woo-commerce প্লাগিন ব্যবহার করে পন্য লিস্টিং করতে পারবেন ।পন্যের ইনভেন্টরী থেকে শুরু করে সবটা হিসাব এই প্লাগিনই করে দিবে। কত গুলো অর্ডার এসেছে কিংবা কতজন অর্ডার করতে গিয়েও অর্ডার করেনি,কতজন ক্যানসেল করলো ইত্যাদি সব ধরনের হিসাব এই টুলসই বলে দিবে। ওয়েবসাইটে অবশ্যই SEO ফ্রেন্ডলী পন্যের বিরণ প্রস্তুত করবেন। সাথে যেই সব মিডিয়াতে পন্য লিস্টিং করা যায় সেখানেও পন্য লিস্টিং করবেন।

ওয়েবসাইট এসইও:

আপনাকে একটি প্রশ্ন করি? আচ্ছা যখন আপনি কোন কিছু ক্রয় করতে চান তখন কি পকেটে টাকা নিয়ে ফেসবুকে প্রবেশ করেন নাকি গুগলে সার্চ করেন? উত্তর যদি হয় গুগল। ঠিক আপনার মতই হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ মানুষ আছে যারা ক্রয়ের উদ্দেশ্যই গুগল সার্চ করে থাকে। কেননা গুগল ভিজিটরকে পন্যের ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য দিয়ে থাকে। কেউ ই কিন্তু পকেটে টাকা নিয়ে ক্রয়ের উদ্দেশ্যে ফেসবুকে আসে না। সবাই ফেসবুকে আসে সোস্যাল নেটওয়ার্কিং করার জন্য। যেখানে কেউই পন্য ক্রয়ে উদ্দেশ্যে আসে না সেখানে পন্য বিক্রির পরিমান কম হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গুগলে তো সবাই ক্রয়ের উদ্দেশ্যই এসে থাকে তা হলে এখানে বিক্রির পরিমান অনেক বেশী। তাই গুগলে এসইও করার মাধ্যমে আপনার সাইটটিকে যখন রেংঙ্কে আনতে পারবেন তখনই মানুষ আপনার সাইটটি গুগলের প্রথম পেজে দেখতে পাবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে মানুষ ক্রয় করতে আপনার সাইটে সরাসরি চলে আসবে কিন্তু আপনাকে কোন বিজ্ঞাপনের জন্য টাকা খরচ করতে হবে না। ভিজিটর গুগল থেকে সরাসরি আপনার সাইটে চলে আসবে কোন রুপ বিজ্ঞাপন ছাড়াই। একদম ফ্রিতেই আপনি ট্রাফিক পাচ্ছেন এসইও করার ফলে। তাই অধিক সেল পাওয়ার জন্য এসইও করা খুবই জরুরী। এসইও করার মাধ্যেমে আপনি পর্যাপ্ত সেল পাবেন অন্যদিকে মার্কেটিং খরচ হবে একদমি কম।

পেয়মেন্ট গেটওয়ে:

কাস্টমার অর্ডার করবে কিন্তু টাকা পরিশোধ করবে কিভাবে? কাস্টমার যাতে সহজেই টাকা পরিশোধ করতে পারে তার জন্য প্রয়োজন একটি পেয়মেন্ট গেটওয়ে। পেয়মেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে ক্রেতারা সব ধরনের টাকা পরিশোধ করতে পারবে। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই সার্ভিসটি দিয়ে থাকে, তাদের সাথে কথা বলে এই সার্ভিসটি নিতে পারেন।

অনলাইন ব্যবসায় মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি

ব্যবসায় অভীষ্ট লক্ষ্য:

প্রতিটি অনলাইন ব্যবসায় কিছু লক্ষ্য থাকে? আপনার বিজনেসের লক্ষ্য গুলো কী কী? অর্থাৎ বিজনেস থেকে আপনার চাওয়াটা কী? টাকা উপার্জনই একটি বিজনেসের প্রধান লক্ষ্য হয়ে থাকে। প্রধান অভীষ্ট লক্ষ্য পাশা-পাশি আরো কিছু লক্ষ্য থাকে। যেমন,

  • প্রচুর টাকা উপার্জন (বৈধ উপায়ে)
  • আত্বসম্মান ও সামাজিক মর্যাদা
  • আত্ব-নির্ভশীলতা ও দায়িত্ব
  • সরকারী সহায়তা ও নিরাপত্তা
  • জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেট
  • জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার, ইত্যাদি।
কাস্টমার অভীষ্ট লক্ষ্য:

কাস্টমারের লক্ষ্য পূরণ যথার্থ করতে পারলে আপনার অনলাইন ব্যবসায় লক্ষ্য পূরণ এমনিতেই হয়ে যাবে। তাই কাস্টমারের উদ্দেশ্যপূরণে খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরী। আপনাকে খুজে বের করতে হবে কাস্টমারের চাওয়াটা কী? তাদের লক্ষ্যটা কী?

যেমন কাস্টমারের লক্ষ্য,

  • পন্যের গুনগতমান বৃদ্ধি
  • দ্রুত পন্য সরবরাহ ( অনলাইন)
  • স্বল্প মূল্যে ক্রয়
  • ট্রাস্ট্রেট ভ্যালু সংযোজন 
  • ল্যাবরেটরী টেস্ট নিরাপদ পন্য
  • আপডেট ফিচার, ইত্যাদি।

অনলাইন ব্যবসায় ধরণ অনুযায়ী কাস্টমার উদ্দেশ্য পরিবর্তন হতে থাকে। আমি কেবল ডেমো লক্ষ্য পেশ করলাম। আপনার বিজনেসের ধরণ অনুযায়ী অবশ্যই কাস্টমার লক্ষ্য সনাক্ত করুন এবং তাদের লক্ষ্য পূরণে কাজ করুন।

কাস্টমার সনাক্ত করণ:

সঠিক কাস্টমারের কাছে পন্য পৌছাতে না পারলে অনলাইন ব্যবসায় সফলতা কখনই আসবে না অন্য দিকে বিজ্ঞাপন খরচ দিনকে দিন বেড়েই চলবে। কাস্টমার সিগমেন্ট তৈরী করুন। বয়স, রুচি, পেশা, বেতন, অঞ্চল, চাহিদা ইত্যাদি আরো অনেক গুলো ফেক্টরের উপর নির্ভর করে কাস্টমার পন্যের চাহিদা উপযোগ। তাই এগুলো সনাক্ত করে বিজ্ঞাপন করতে হবে। ধরুন, একজন রিক্সাওয়ালাকে iPhone 11 Pro ২০% ডিস্কাউন্ট দিয়ে মাত্র ১ লক্ষ টাকায় দেওয়া হচ্ছে এবং Apple এর মার্কেটিং হেড এসে এই অফারটা রিক্সাওয়ালাকে জানালো। পন্যের গুনগত মান ঠিক আছে, আবার সেল্সম্যানও ঠিক আছে তবুও কী পন্যটি সেল হবে? উত্তর: না। কারণ,অডিয়েন্স টার্গেট ঠিক নেই। তাই পন্য শুধু মার্কেটিং করলেই হবে না তার সাথে ৩টা জিনিসই ঠিক রাখতে হবে। 

  • পন্যের গুনগতমান
  • ভালো সেল্সম্যান (উপস্থাপন)
  • টার্গেট অডিয়েন্স (গ্রাহক)

উপরিক্ত ৩টি জিনিসের মধ্যে অডিয়েন্স সব থেকে বেশী গুরুত্বের। কেননা, পন্যের মান ততটা ভালো না হলেও উপস্থাপন ভালো দ্বারা সেল করা সম্ভব! যদি অডিয়েন্স ঠিক থাকে। তাই অডিয়েন্স ঠিক রেখে মার্কেটিং করা অত্যন্ত জরুরী। আপনি যদি নিজে সঠিক শ্রোতা সনাক্ত করতে না পারেন, তাহলে একজন ভালো মার্কেটার নিয়োগ করুন। আরো পড়ুন: অধিক সেল পেতে হলে কী কী করনীয়!?

অনলাইন ব্যবসায় মার্কেটিং চ্যানেল নির্ধারণ:

কাস্টমার সনাক্তের মত মার্কেটিং চ্যানেলও নির্ধারণ করতে হবে। কেননা সব চ্যানেলে সব ধরনের অডিয়েন্স সব সময় একি রকম থাকে না। ধরুন, অস্টেলিয়ার একটি ইকমার্স হেল্থ শপ যাদের দেশের অডিয়েন্সের মধ্যে থেকে শুধু মাত্র ১৮-৩৫ বছরের মানুষই ফেসবুকে বেশী আসে। অন্য দিকে ৩৬-৫০ বছরের মানুষরা Google এর হেল্থ রিলেভেন্ট ব্লগ পড়তে বেশী পছন্দ করে। আবার, মেয়েরা Instagram এ হেল্থ পোস্টে বেশী এনগেজমেন্ট থাকলেও ছেলেদের বিচরণ ততটা ভালো না। আবার Pinterest এ ২৫-৪০ বছরের ছেলে,মেয়ে উভয়ই বেশী আসে কিন্তু LinkedIn এ আসে না। এখন যদি আপনার বিপণন চ্যানেল সঠিকভাবে চিহ্নিত করা না হয় তবে বিজ্ঞাপনগুলি ভুল দর্শকদের কাছে যাবে। তখন দেখা যাবে শুধু শুধু টাকা নষ্ট।

দেখা গেল আপনি ফেসবুকে প্রচুর টাকা খরচ করলেন অথচ ওই পন্যটির জন্য গুগলের অডিয়েন্স উপযুক্ত ছিলো। সঠিক চ্যানেলে মার্কেটিং না করায় আপনার ROI বজায় থাকলো না। তাই বলছি সঠিক অনলাইন চ্যানেল নির্ধারণ করুন।

ইনবাউন্ড ও আউটবাউন্ট মার্কেটিং:

সহজ কথায় যদি বলি ইনবাউন্ড মার্কেটিং হলো কাস্টমার নিজে থেকেই আপনার কাছে আসবে আর আউটবাউন্ড মার্কেটিং হলো কাস্টমারকে জোর করে নিয়ে আসতে হবে। অর্থাৎ পেইড বিজ্ঞাপন করার মাধ্যমে কাস্টমারকে জোর করে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে সাইটে নিয়ে আসা অথবা তার লিড (ইমেইল) কালেক্ট করা এটাই হলো আউটবাউন্ড মার্কেটিং যেটা মূলত পেইড বিজ্ঞাপন হয়ে থাকে। আর ওই ইমেইলটা দ্বারা আপনি যখন কাস্টমারকে প্রতিনিয়ত হেল্পফুল ইমেইল সেন্ড করবেন তখন সে এক সময় আপনার প্রতি ইনফ্লুয়েন্স হয়ে নিজে থেকেই সাইটে চলে আসবে এটাই মূলত ফ্রি তথা ইনবাউন্ট মার্কেটিং। ইনবাউন্ড মার্কেটিং আরো অনেক রকম ভাবে করা যায় বিস্তারিত জানতে এখানে ।

খরচ এবং বিপণন সময়কাল:

অনলাইন ব্যবসায় শুরুতে খেয়াল রাখতে হবে! একটা টাকাও যাতে অযথা ব্যয় না হয়। বিজ্ঞাপনে টাকা খরচ হবে এমন ভাবে যাতে ১ বছর বিজ্ঞাপন করে পরবর্তী বছর গুলো থেকে সেল বের করে আনা যায়। অর্থাৎ বিজ্ঞাপনে খরচ হবে কম সেল হবে বেশী। অল্প খরচে অধিক সেল পেতে অবশ্যই আপনাকে প্রথম বছরটিতে ব্রান্ড মার্কেটিং করতে হবে। ব্র্যান্ড মার্কেটিং কখনই ফ্রিতে সম্ভব নয়। আপনার ব্যবসায়ের নাম মানুষের মুখে মুখে তখনই পৌঁছাবে যখন আপনি প্রোপার ব্র্যান্ড মার্কেটিং করবেন। তাই শুরুর বছরটা হবে ব্রান্ড মার্কেটিং বছর।

প্রথম বছরে খরচের পরিমান অধিক হলেও আপনার প্রতিষ্ঠানটি ব্র্যান্ডিং পরিচিতি পাবে ফলে পরবর্তী বছর গুলোতে Inbound মার্কেটিং দ্বারা অল্প খরচেই অধিক সেল পেতে থাকবেন। কেননা, প্রথম বছর ব্র্যান্ড মার্কেটিং করার ফলে আপনি পাবেন ফেসবুক ফলোয়ার, পেজ রিভিউ,গ্রুপ মেম্বার, ইউটিউব সাব-স্কাইবার, LinkedIn,Twitter, Instagram ও Pinterest ফলোয়ার। একই সাথে Google থেকে পাবেন নিয়মিত ভিজিটর। সেই সাথে থাকবে লিড কালেশন যার ফলে আপনি পরবর্তী  বছর গুলোতে ফ্রিতেই সবাইকে Email এবং এসএমএস মার্কেটিং করতে পারবেন। যেহেতু প্রথম বছরেই প্রচুর ফলোয়ার পেয়ে ব্র্যান্ডিং হয়ে গিয়েছেন তাই পরবর্তী বছর গুলোতে পেইড বিজ্ঞাপন না দিলেও আপনার সেল ঠিকই আসবে। কেননা তখন আপনার প্রতিষ্ঠানকে অনেকেই চিনবে ফলে নরমাল পোস্টেও অনেক রিচ চলে আসবে। ইউটিউব রিভিউ ভিডিও থেকেও প্রচুর অর্ডার পাবেন। অন্য দিকে SEO করার ফলে গুগল থেকে ফ্রিতেই অর্গানিক ট্রাফিক আসতে থাকবে। তাই পরবর্তী বছর গুলোতে এসইও এবং ইনবাউন্ড মার্কেটিং এর উপর নজর দিলে খরচ কম হবে, সেল বেশি হবে।

কিন্তু আপনি যদি উল্টো পথে হাঁটেন অর্থাৎ প্রথম বছর ব্র্যান্ড মার্কেটিং এ নজর না দিয়ে শুধু ফেসবুক বুস্ট করে গেলেন এতে করে কিছুটা সেল পেলেও ইনবাউন্ট মার্কেটিং এ তেমন সাড়াই পাবেন না। অন্য দিকে ব্র্যান্ডিং না হওয়ায় সারাজীবন আপনাকে বুস্ট তথা পেইড বিজ্ঞাপন করে যেতে হবে। আর এভাবে পেইড বিজ্ঞাপন করে গেলে না আপনার খরচ কমবে না আপনার সেল বাড়বে। তখন মনে হবে অনলাইন বিজনেস আপনার কপাল পুড়িয়ে দিয়েছে। আরো পড়ুন: ব্যবসায়ে খরচ কমিয়ে সেল বৃদ্ধি করবেন কিভাবে?

ভাইরাল কনটেন্ট মার্কেটিং:

ইনবাউন্ড মার্কেটিং এর একটি অংশ ভাইরাল কনটেন্ট মার্কেটিং। অন্যদিকে আউটবাউন্ড মার্কেটিং এর একটি বড় অংশ ব্র্যান্ড মার্কেটিং।

তবে প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং তৈরীতে আউটবাউন্ড ও ইনবাউন্ড উভয়কেই কাজে লাগাতে হয়। কেননা শুরুর দিকে ব্র্যান্ডিং হওয়াটা বেশী জরুরী। আপনি যদি ব্রান্ড মার্কেটিং করার সময় এই ভাইরাল কনটেন্ট মার্কেটিং যথার্থ কাজে লাগাতে পারেন তবে আপনার প্রতিষ্ঠান অল্প খরচেই বহু গুন পরিচিতি লাভ করবে। তাই ভাইরাল কনটেন্ট মার্কেটিং নিয়ে এখন থেকেই ভাবনা শুরু করে দিন। আরো পড়ুন: কিভাবে ভাইরাল কনটেন্ট মার্কেটিং তৈরী করবেন।

ফলোআপ  মার্কেটিং:

ব্রান্ড মার্কেটিং হয়ে যাওয়ার পর শুধু ইনবাউন্ট মার্কেটিং করার মাধ্যমেই সেল পাওয়া সম্ভব তাই বলে যে আপনি একদমি আউটবাউন্ট মার্কেটিং করবেন না তা কিন্তু নয়। বরং আপনার বিক্রিটাকে আরো বারিয়ে তুলার জন্য প্রতি মাসেই নিদির্ষ্ট কিছু অংশ আউটবাউন্ট মার্কেটিং এ খরচ করতে হবে। এর দ্বারা যেমন সেল বৃদ্ধি পাবে তেমনি ভাবে ব্র্যান্ডিং বজায় থাকবে। আসলে অনলাইন ব্যবসায় নিদিষ্ট মার্কেটিং বলতে কিছুই নেই বরং আপনাকে ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী সব ধরনের মার্কেটিং এ বৈচিত্রতা বজায় রাখতে হবে। যত গুলো মার্কেটিং চ্যানেল রয়েছে সব গুলোতেই ফলোআপিং করে যেতে হবে।

ব্যবসায় পরিচালন ও সফলতা

কার্য ক্যালেন্ডার:

দিন, সপ্তাহ, মাসের কার্য ক্যালেন্ডার প্রস্তুত করুন। প্রতিদিন আপনার কর্মীরা কি ধরনের কাজ করছে, কাজের কোয়ালিটি কি? সব কিছুর দিকে নজর রাখুন। তাদের কাজের রিপোর্ট তৈরী করে প্রতি মাসেই এনালাইসিস করুন। এতে বুঝতে পারবেন কোন ডিপার্টমেন্টে কাজের ঘাটতি রয়েছে। ফলে কার্য ক্যালেন্ডার দ্বারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন অন্য দিকে কাজের রুটিনও যথার্থ চলতে থাকবে।

সেবা অথবা পন্যের মান উন্নায়ন:

পন্য পরিচালন প্রতিষ্ঠানে পন্যের প্রতি ও সেবা পরিচালন প্রতিষ্টানে সেবার প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। ব্যবসায় টিকে থাকতে প্রতিনিয়তই মান উন্নায়ণ করে যেতে হবে। শুরুর দিকের পন্য দিয়ে আপনি বছর বছর ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবেন না তাই আপনাকে প্রতি কয়েক মাসেই ধরনের বৈচিত্রতা আনতে হবে। হতে পারে সেই বৈচিত্রা কোন পন্যের কোয়ালিটি, নতুন আইটেম, মোড়কীকরণ,নতুন ভ্যালু সৃষ্টি অথবা নতুন কোন ফিচার যুক্ত করা ইত্যাদি নিয়ে সব সময়ই কাজ করে যেতে হবে।

সঠিক কর্মী নির্বাচন:

কর্মী নির্বাচনে খেয়াল রাখুন কে কতটা স্মার্ট। অর্থাৎ তার কাজ কতটা স্মার্ট। আমরা জানি নির্দিষ্ট কোন কাজের পিছনে যদি কোন ব্যক্তি ৫ হাজার ঘন্টা শ্রম ব্যয় করে তবে সে সেই কাজটা ভালো জানে। আর ১০ হাজার ঘন্টা সময় ব্যয় করা মানে সে সেই কাজে অত্যাধিক অভিজ্ঞ। সব সময় অভিজ্ঞদের দিয়ে কাজ করালেই হবে না দেখতে হবে সে তার অভিজ্ঞতায় কতটা স্মার্ট। একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি হয়তো কাজটা ভালো পারবে কিন্তু একজন স্মার্ট অভিজ্ঞ ব্যক্তি কাজের বাহিরেও নানান বিষয়ে আপনাকে সহায়তা করবে। বছর হিসাবে কর্মী নির্বাচন যথাউপযুক্ত নয় কেননা একজন ব্যক্তি দিনে ৪ ঘন্টা কাজ করেই ৫ বছর কাটিয়ে দিতে পারে তাই বলেই কী তার ১০ হাজার ঘন্টা হবে? অন্যদিকে দিনে ১২ ঘন্টা সময় ব্যয় করা ব্যক্তি ঠিকই আড়াই বছরে ১০ হাজার ঘন্টা ক্রস করে ফেলবে। তাই দেখতে হবে কর্মীর কাজের প্রতি কত ঘন্টা সময় ব্যয় হলো এবং সেই ব্যয়শীল কাজটি কতটা স্মার্টশীলভাবে সম্পূর্ণ করলো। একজন আদর্শ উদ্যোক্তা সঠিক কর্মী নির্বাচনে সর্বদা সতর্ক থাকে।

আপডেট ফিচার:

নিত্য নতুন আপডেট সন্নিবেশ করতে হবে। ব্যবসায় প্রতিযোগীদের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে গেলে এ ব্যাপারে সব সময়ই নজর রাখতে হবে। প্রতিযোগীদের পিছনে ফেলতে সবার আগে আপডেট ফিচার যুক্ত করতে হবে। আপনার অনলাইন ব্যবসার আপডেট ফিচার দেখে অন্যরা আপনাকে অনুসরণ করবে কিন্তু আপনি কাউকেই অনুসরণ করবেন না। কেননা আপনি হবেন অন্যদের রোল মডেল। তবে সব ক্ষেত্রেই এটা হয়তো সম্ভব হবে না তবুও চেষ্টা করতে হবে সবার আগে নিজের ব্যবসায় আপডেট ফিচার যুক্ত করা। যে যত বেশী আপডেটেড কাস্টমার একুয়েসেশন তার ব্যবসায় ততই বেশী।

আপডেট ভ্যালু সৃষ্টি:

প্রতিযোগীদের থেকে একধাপ এগিয়ে থাকার সব থেকে ভালো উপায় নতুন নতুন আপডেট ভ্যালু তৈরী করা। অনলাইন ব্যবসায় যত বেশী আপডেট ভ্যালু তৈরী হবে আপনার ব্যবসায় ততই বেশী উন্নতি করবে, যা এক সময় আপনার প্রতিযোগীদেরকেও ছাড়িয়ে যাবে। কেননা তারা শুধু ভ্যালু নিয়ে কাজ করে আর আপনি আপডেট ভ্যালুতে কাজ করেন। ফলে তাদের থেকে আপনার কাস্টমার একটু বেশীই সন্তুষ্ট থাকবে। তাই নিত্য নতুন আপডেট ভ্যালু সৃষ্টি করুন।

ব্যবসায় SWOT করুন:

ব্যবসার বর্তমান অবস্থাকে পরিমাপ করার সব থেকে ভালো উপায় SWOT এনালাইসিস করা। এতে করে আপনি সহজেই বুঝত পারবেন আপনারঅনলাইন ব্যবসায় কোথায় দুর্বল দিক কোথায় শক্তিশালী দিক, কোথায় বাধা কোথায় সুযোগ।

খাতা,কল নিয়ে বসে যান ব্যবসায় SWOT করতে,

S= Strengths,

W= Weaknesses,

O= Opportunities,

T= Threats

খাতার এক পৃষ্ঠায় ব্যবসায় দুর্বল দিক গুলো লিস্ট করুন এরপর শক্তিশালী লিস্ট। তারপর আপনার ব্যবসায় সহায়ক সুযোগ গুলো কী আছে তা বের করুন এবং সর্বশেষ ধাপে ব্যবসায় বাধা গুলো কী কী তা সনাক্ত করুন। এবার দুর্বল দিক গুলোর মোকাবেলায় শক্তিশালী দিক কাজে লাগিয়ে ব্যাকাপ দিন অন্য দিকে বাধা গুলোকে সহায়ক শক্তি দিয়ে মোকাবেলা করুন। ব্যাস হয়ে গেলো! ব্যবসায় সফলতা নিরুপণে SWOT করা অত্যান্ত জরুরী একটি বিষয়।

সফলতার পথ নির্ধারণ:

সফল ব্যবসায়ী হতে নির্ধারণ করুন ৬ মাসে ব্যবসাটিকে কোথায় নিয়ে যাবেন। ১ বছর পর আপনার অবস্থান কী হবে? ২ বছর পর কতটু গ্রোথ করবে এবং ৫ বছর পর কতটা সফলতায় নিজেকে দেখতে চান। সবটাই পরিকল্পনায় রেখে এগিয়ে যেতে হবে। এগিয়ে যাওয়ার পথে অনেক বাধা বিপত্তি চলে আসবে সে গুলো পথ পাড়ি দিতে হবে।

একশন ও সফল মনোভাব:

পৃথিবীতে অনেক কিছুই আছে যা হয়তো আপনার জন্য নয়। তবে আপনার জন্যও অনেক কিছু আছে যা হয়তো অপেক্ষমান। সেই অপেক্ষমান কাজটিকে কাজে লাগিয়েই আপনার স্বপ্নপূর্ণ করতে হবে। ব্যবসায় অনেক ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপই আছে যা সাময়িক সফলতার ইঙ্গিত করলেও পরিশেষে দেখায় যায় ভিন্ন। দয়া করে আজ থেকে এমন ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপে কখনই পা বাড়াবেন না। কোন কিছু করার আগে শতবার ভাবুন তার পরই শুরু করুন। নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করুন,

১। যে কাজটি বর্তমানে করছেন তা কি সত্যিই আপনার স্বপ্নপূরণে লক্ষ্য ঠিক রাখবে?

২। পরিশ্রমটা যেখানে ব্যয় হচ্ছে তা কি সত্যিই সফলতায় কনভার্ট করবে?

৩। যাদেরকে কাজে লাগিয়ে সফল হওয়ার চিন্তা করছেন তারা কী আদোও যথার্থ কাজ করবে?

এই ৩টি প্রশ্নের উত্তরে যদি কনফিডেন্ট থাকে তবে বলবো এগিয়ে যান। কিন্তু যদি কনফিউস্ট থাকেন, তবে বলবো এই মুহুর্তেই সেই কাজটি ছেড়ে দিন। কারণ আজকের পদক্ষেপই কাল আপনাকে ভিষণ রকম দুর্বিপায় করে ছাড়বে।

তাই আজ থেকে যে কোন কাজ করার আগে এটা নিয়ে ভাববেন। লাইফে সফল হতে স্পাইডারম্যান ও অথবা সুপারম্যান হতে হয় না ভালো একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে গেলেই সফল হওয়া যায়। যদি কিছু করতে চান তবে এখন এই মুহুর্তেই শুরু করুন। কাল থেকে শুরু করবো বলে ফেলে রাখা কাজগুলো আর কখনই শুরু হয় না। সফল ব্যক্তির শ্রেষ্ট সময় বর্তমান।

আপনি বিশ্ববিখ্যাত যত প্লানই করেন না কেন তার ১%ও সফল হওয়ার পথে কাজে লাগবে না যদি আপনি শুরুই না করেন। সফল হওয়ার পথের সব থেকে বড় বাধা শুরুটাই না হওয়া কিংবা বিলম্ব করা। আর এই বাধার জন্য কেবল আপনিই দায়ি। একজন অলস ব্যক্তি নিজেই নিজের শত্রু। আর যদি শুরু করেই দেন এবং চেষ্টাও চলমান থাকে, তবে দয়া করে আর থামবেন না। চেষ্টা করতে গিয়ে হয়তো এক সময় মনেও হবে আমার দ্বারা হয়তো আর হবে না। আবার আশে পাশের মানুষও হাসি তামাশা করবে! তখন তবুও আপনি থেমে যাবেন না। দাঁতে দাত চেপে বুকে বল নিয়ে তবুও পরিশ্রমের লড়াইটা করে যান। থামবেন শেষটা করে। শেষটা দেখে। অন্যের হাসির জবাবটা দিয়ে। দেখবেন শেষ হাসিটা আপনারই হবে। সফলতা আপনার হাতের মুঠোয় এসে ধরা দিবেই দিবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − three =